January 6, 2025, 11:46 am

সাবেক মেজর সিনহার মৃত্যু: ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে টেকনাফে এজাহার।

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : Wednesday, August 5, 2020,
  • 185 Time View

পুলিশের চেকপোস্টে গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বোনের দায়ের করা এজাহার আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় পৌঁছেছে। থানার নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি এ.বি.এম দোহা’র সাক্ষরের পরই এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হবে বলে জানা গেছে।

এ পর্যায়ে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এজাহারটি মামলা হিসেবে টেকনাফ মডেল থানা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করলে ধারা ৩০২, ৩০১ ও ৩৪ দণ্ড বিধিতে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতে পারে।

মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে প্রত্যাহার করে ৪ আগস্ট তাকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়। যদিও প্রত্যাহার হওয়ার আগেই গত ৪ আগস্ট মঙ্গলবার নিজেকে অসুস্থ উল্লেখ করে ছুটিতে যান অভিযুক্ত ওসি  প্রদীপ কুমার দাশ। তবে ৬ আগস্ট রাত আড়াই পর্যন্ত  মামলা রেকর্ড কিংবা আসামিদের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি টেকনাফ থানাসূত্র। এরআগে, টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ্ এর দেওয়া আদেশের কপি, সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস সহ টেকনাফ মডেল থানায় প্রেরণ করা হয়।

মোহাম্মদ ফারুক নামক আদালতের একজন বাহক দিয়ে রাত পৌনে ৯ টার দিকে আদালতের আদেশ সহ অন্যান্য কাগজপত্র টেকনাফ মডেল থানায় পৌঁছানো হয় বলে কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক ইলাহী শাহজাহান নূরী গণমাধ্যমকে  নিশ্চিত করেছেন।

থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) রাতে জানান, ‘মামলা রেকর্ড হওয়ার ব্যাপারে তার কাছে তথ্য নেই। সিআর ৯৪/২০২০ নামে রেকর্ড এখন পর্যন্ত নেই। তবে থানার নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। কারণ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি দেখভাল করছেন।’

রাত ১২টার দিকে নতুন ওসি এ.বি.এম  দোহাকে ফোনকল ও ক্ষুদেবার্তা দেয়ার পর যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে রাত আড়াইটায় আবারও ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলে সময় নিউজ। এসময় তিনি জানান, ‘মামলা রেকর্ড কিংবা আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন ওসির সঙ্গে তিনিও ফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।’

টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস, পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং এসআই নন্দলাল রক্ষিত ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। শুনানি শেষে মামলাটি রেকর্ড করতে টেকনাফ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন বিচারক।
মামলাটির তদন্তভার র‍্যাবকে দেয়ার বাদীর আবেদন গ্রহণ করে আদালত। এসময় র‍্যাব-১৫ মামলাটি তদন্ত করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়। অবশ্য, র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে.কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, আদালতের লিখিত অনুমতি হাতে পেলেই মেজর সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করবে বলে র‍্যাব।

বুধবার (০৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন, সব কিছু মাথায় রেখে র‌্যাব একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করবে।
র‌্যাব জানায়, সিনহার মামলাটি তদন্ত করতে র‌্যাবকে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। কক্সবাজারে মূলত যে ঘটনাটি ঘটেছে এর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করবো।
উল্লেখ্য, ৩১ জুলাই ঈদের আগের রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। তার গাড়িতে থাকা তার সঙ্গী সিফাতের ভাষ্যমতে, সিনহাকে কোনোরুপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই চেকপোষ্টে গাড়ি থেকে নামতে বলে চার রাউন্ড গুলি ছুড়ে হত্যা করেন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী।

এদিকে, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, উষ্কানি দিয়ে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। কারো প্রভাবে নয় অপকর্মের দায় নির্ধারিত হবে আইনিভাবে। বুধবার (০৫ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজারে যৌথ ব্রিফিং এ কথা বলেন তারা।
কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহার মৃত্যুর বিবরণ নিয়ে সেনা ও পুলিশ বাহিনীর মাঠ পর্যায়ে পরস্পর বিরোধী বিবরণের সমাধানে চলছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে। এরমধ্যে একই হেলিকপ্টারে উড়ে কক্সবাজার উড়ে যান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
দুই বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত আর দুই বাহিনীর সম্পর্ক নিয়ে কথা বললেন। সেনাপ্রধান বলেন, সম্পর্কে চিড় ধরে এমন কোনো কাজ দুই বাহিনী করবে না।
জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। যে ঘটনা ঘটেছে, অবশ্যই সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী মর্মাহত। আমি আপনাদের মাধ্যমে যে মেসেজ দিতে চাই, তা হলো এটাকে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ বলেন, একটি মহল দুই বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির অপচেষ্টা করলেও তা সফল হবে না।

বেনজীর আহমেদ বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক। সিনহার মৃত্যুতে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হবে না। কমিটি প্রভাবমুক্ত পরিবেশে তদন্ত করবে। কমিটি যে সুপারিশ দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলমান পরিস্থিতি কক্সবাজারে মাদক বিরোধী তৎপরতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান দুই বাহিনী প্রধান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71